ভাইরাল সংগীত কোর্স


সালাহ উদ্দিন শুভ
বাংলাদেশের বর্তমানে জনপ্রিয় দুজন সংগীতশিল্পী হারামি আলী ও ছলনা গাজী মঞ্চ কাঁপাচ্ছেন। তারা দুজনেই জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে ভাইরাল হয়ে রাতারাতি তারকা বনে যান। তাদের এই নামও অবশ্য ছদ্মনাম। তাদের দুজনের দুটি ভাইরাল গানের নামে তাদের নামকরণ করা হয়েছে। ‘ফিমেইল ও ফিমেইল তুই হারামি রে’ এই গান থেকে এসেছে হারামি আলী এবং ‘বডি দিলা হার্ট দিলা না ও ছলনা’ গান থেকে এসেছে ছলনা গাজী। তারা দুজনেই অবশ্য বাংলা গানকে অন্য পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। কিছুটা ফোক ও গাঁজার সংমিশ্রণে বেশ দারুণ লাগে শুনতে। আর বাংলাদেশের সকল মানবকুলও এই গানটি বেশ আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করেছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তত্পরতা বৃদ্ধির কারণে বর্তমানে নেশাদ্রব্য এবং এই ধরনের গান দুটোরই প্রচলন কিছুটা কমে এসেছে। তবে হারামি আলী ও ছলনা গাজীর মতো তারকা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রতিভা প্রদর্শন করে থাকেন। তবে সবাই তো আর হারামি আলী ও ছলনা গাজীর মতো প্রতিভা নিয়ে জন্ম গ্রহণ করেননি, তাই এই ধরনের নব্য প্রতিভাবানদের নিয়ে তারা দুজন বিশেষ কোর্স শুরু করেছেন। যে কোর্সটি করলে শেখা যাবে কিভাবে গান গেয়ে ভাইরাল হওয়া যাবে, কিভাবে মিউজিক ভিডিও বানাতে হবে, কিভাবে গান গাওয়ার মাঝে হাসতে হবে, সর্বোপরি কিভাবে একজন ভাইরাল সুপারস্টার হওয়া যাবে তার ফর্মুলা।
কালামের ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন শিল্পী হবে। সেই ছোট বয়স থেকেই নিয়মিত গান চর্চা করত এবং গান শিখতে যেত কোনোভাবে টাকা-পয়সা জোগাড় করে। কালামের গলাটাও বেশ ভালো কিন্তু কোনোভাবেই শিল্পী হতে পারল না। পাড়ার বন্ধুরা এখন কালামকে দেখে মজা নেয়। কালাম মাথা নিচু করে হেঁটে যায়, কষ্টে তার বুক ফেটে যায়। একদিন আর এই অপমান সহ্য না করতে পেরে কালাম মুখ খোলে, প্রতিবাদ করে। বলে ওঠে, ‘ফাজলামি বন্ধ কর বেয়াদবের দল। তোরা শুধু কুকুরের মতো ঘেউ ঘেউ করতে পারিস। এতই যখন পারিস তাহলে একটা গান গেয়ে দেখা না। হয়ে দেখা একজন শিল্পী।’ একথা শুনে ওই মজা নেওয়া দলের মধ্যে একজন এগিয়ে এলো। তার নাম কলিম। কলিম সামনে এগিয়ে এসে কালামের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করল। সে একমাসের মধ্যে শিল্পী হয়ে কালামকে দেখিয়ে দেবে চাইলেই যে কেউ শিল্পী হতে পারে। কালাম বলল, ‘ঠিক আছে, যদি তুই শিল্পী হতে পারিস তবে আমি সারাজীবন তোর গোলামি করব।’ কালামের এমন আত্মবিশ্বাসের অবশ্য কারণও আছে, কারণ সে অতীতে কলিমের গান শুনেছে। সেই গান শুনে গাছ থেকে পাখিরাও পালিয়ে যায়, ছাগলেরা পাতা খাওয়া বাদ দিয়ে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে ডাকতে শুরু করে, গরুরা হাম্বা হাম্বা করে দড়ি ছিঁড়ে গুঁতা দিতে তেড়ে আসে, পুকুরের মাছ আত্মহত্যা করে ভেসে ওঠে। কালাম পুরোপুরি নিশ্চিত, কলিম যদি শিল্পী হতে পারে তবে ইঁদুরও শিল্পী হতে পারবে।
কলিম খুশি মনে বাড়ি চলে গেল, পরদিন হারামি আলী ও ছলনা গাজীর ভাইরাল সংগীত কোর্সে ভর্তি হয়ে গেলেন। কলিমকে এলাকার বন্ধুবান্ধবরা একমাসের জন্য আর খুঁজে পেল না। ঠিক একমাস পর সোশ্যাল মিডিয়ার এপাশ থেকে ওপাশে একটি গান মাছির মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে। গানটির নাম ‘ভেউ ভেউ সং’। অবশেষে জানা গেল শিল্পী কলিমের প্রথম একক হিট ‘ভেউ ভেউ সং’। নামকরণ করা হয়েছিল কালামের একটি উক্তি ‘তোরা শুধু কুকুরের মতো ঘেউ ঘেউ করতে পারিস’ থেকে। অবশ্য এই গানে ঘেউ ঘেউ শোনা ছাড়া আর বিশেষ কিছুই নেই। মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে গানটি সুপারহিট হয়ে গেল এবং কলিমও তারকা বনে গেল। তার নাম হয়ে গেল ঘেউ কলিম। পরে এক টিভি চ্যানেল থেকে তার একান্ত সাক্ষাত্কার নেওয়া হয় যেটা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।
এই কাহিনির পর কালামকে আর খুঁজে পাওয়া গেল না। জানা গেছে কালাম নিরুদ্দেশ, কেউ কেউ বলছে ঢাকা ওয়াসার পানির লাইনের পানি খেয়ে আত্মহত্যা করেছে কালাম। তবে কলিমের মনে বেদনায় ভরপুর আজ। কালামকে তার গোলাম বানাতে পারেনি বলে নয়, বরং কালামকে বুকে জড়িয়ে ধরবে বলে। কালামের সঙ্গে বাজি ধরেই সে আজ শিল্পী। আজ কালাম নেই, বিরহে তার বুক ফেটে যায়। জানা গেছে সুপারস্টার ঘেউ কলিম, কালামের স্মরণে একটি গান বানিয়েছিলেন যার নাম ‘ক্যালমা’। যেটি ব্লকবাস্টার হিট হয়েছে বলে জানা গেছে। হারামি আলী ও ছলনা গাজীর ভাইরাল সংগীত কোর্স এখন অনেক জমজমাট। এত শিক্ষার্থী নিতে পারছেন না বলে তারা এখন ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছেন। জানা গেছে সেই ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করেও কেউ কেউ আজ শিল্পপতি বনে গেছেন!

ঠাট্টা, ইত্তেফাক
সংখ্যা - ৪৭০
৩১ মার্চ, ২০১৯

No comments:

Post a Comment